অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইতিহাসের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী হিসেবে যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসতে চলেছেন ঋষি সুনাক। সোমবার (২৪ অক্টোবর) তার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বরিস জনসন ও পেনি মর্ডান্ট প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই উল্লাসে ফেটে পড়েন ঋষির সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা, বিশেষ করে ভারতীয়রা।
কিছুদিন আগেই ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে মুক্ত হওয়ার ৭৫ বছরপূর্তি উদযাপন করেছে ভারত। এমন একটি বছরে ভারতীয় বংশোদ্ভূত কেউ সেই ব্রিটিশদেরই শাসক হিসেবে আবির্ভূত হওয়ায় বিষয়টি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অনেকের কাছেই এটি, বিশেষ গর্বের বিষয়।
তাছাড়া, সোমবার দীপাবলির উৎসব পালন করছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। এর আগের রাতেই টি-২০ বিশ্বকাপে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়েছে ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দল। এগুলোর রেশ কাটতে না কাটতেই ঋষি সুনাক প্রধানমন্ত্রী হওয়ার খবর। ফলে আনন্দ যেন বাঁধ ভেঙেছে ভারতীয়দের। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উল্লাস প্রকাশ করেছেন।
ডি. মুথুকৃষ্ণান নামে এক ব্যবহারকারী টুইটারে লিখেছেন, এবারের দীপাবলি ভারতের দুর্দান্ত ক্রিকেট জয়সহ সব কিছুর জন্যই দুর্দান্ত। একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও আমাদের নারায়ণ মূর্তির (প্রযুক্তি ব্যবসায়ী) জামাই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন।
তিনি লিখেছেন, ঋষি সুনাক গীতায় (হিন্দুদের পবিত্র গ্রন্থ) হাত রেখে এমপি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার জন্য একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেন, সেটি ভারতের জন্য কী দারুণ একটি দিন হবে। তাও আবার ব্রিটেন থেকে আমাদের স্বাধীনতালাভের ৭৫তম বছরে।
৪২ বছর বয়সী ঋষি সুনাকের জন্ম ১৯৮০ সালে দক্ষিণ-পূর্ব যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটনে। তার বাবা যশবীর সুনাক জন্মগ্রহণ করেন কেনিয়ায়। তার মা ঊষা সুনাক জন্মগ্রহণ করেন তৎকালীন তাঙ্গানিকায়, যা বর্তমানে তানজানিয়ার অংশ।
ঋষির দাদা-দাদি ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন ও ১৯৬০ এর দশকে সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে পূর্ব আফ্রিকা থেকে যুক্তরাজ্যে চলে আসেন।
বিদেশে ভালো কিছু অর্জনের সঙ্গে নিজেদের শিকড় খুঁজে পেলে ভারতীয়রা গর্ব করতেই পারেন। এর আগে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলা, অ্যালফাবেটের সিইও সুন্দর পিচাইয়ের জন্যেও তাদের মধ্যে একই ধরনের উল্লাস দেখা গেছে।
কিছু ভারতীয় আশা করছেন, ঋষি সুনাক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর যুক্তরাজ্য-ভারত সম্পর্কে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে। সাবেক ভারতীয় কূটনীতিক রাজীব ডোগরা টুইটারে লিখেছেন, ঋষি সুনাক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হওয়া যুক্তরাজ্যের জন্য হবে দীপাবলির দারুণ উপহার এবং ভারতে উদযাপনের কারণ।
ঋষির খবরে কনজারভেটিভ পার্টির ভারতীয় বংশোদ্ভূত অন্য এমপিরাও সন্তুষ্টি জানিয়েছেন। নটিংহ্যামের এমপি রবি কুমার বলেছেন, আমি ৮০-৯০’র দশকে বড় হয়েছি এবং আমার জীবদ্দশায় একজন অশ্বেতাঙ্গ (ব্রিটিশ) প্রধানমন্ত্রী দেখবো, কল্পনাও করিনি। আমি সবসময় এটিকে শ্বেতাঙ্গদের দেশ হিসেবে দেখেছি এবং আমরা কেবল অভিবাসীদের সন্তান হিসেবে আসবো… সুতরাং একজন ব্রিটিশ ভারতীয় নেতাকে দেখা অসাধারণ।
থিংক-ট্যাংক ব্রিটিশ ফিউচারের পরিচালক সুন্দর কাটওয়ালার মতে, এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। তিনি বলেন, এটি ব্রিটিশ রাজনীতির শীর্ষে এক নতুন স্বাভাবিকতা এবং আংশিকভাবে এই মুহূর্তের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার ফল।
কাটওয়ালা বলেন, আমরা (যুক্তরাজ্যে) তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রীর পরে প্রথম এশীয় (বংশোদ্ভূত) প্রধানমন্ত্রী পাচ্ছি… ঋষি সুনাক আসলে ইতিহাসে পঞ্চম ব্রিটিশ এশীয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, যা ২০১০ সাল পর্যন্ত একজনও ছিল না। সূত্র: রয়টার্স
Leave a Reply